Man’s Search for Meaning Bangla-ম্যান্স সার্চ ফর মিনিং জীবন বদলে দেওয়া Inspiring বইয়ের বাংলা অনুবাদ 2023
Last updated on January 24th, 2024 at 02:19 pm
Man’s Search for Meaning Bangla translation by Romzanul Islam Probin. Man’s Search for Meaning is one of the best-selling books in the world written by Austrian neurologist, psychiatrist, and philosopher Victor Emil Frankl. The translation includes the Logotherapy part as well.
অনুবাদকের মুখবন্ধ
প্রায় এক দশকেরও অধিক সময় ধরে আমি ইংরেজি ভাষায় লিখিত বই সমূহ সংগ্রহ করতে ও গোগ্রাসে পড়তে থাকি। দর্শন আর সাহিত্যে আমার যথেষ্ট আগ্রহ থাকলেও একজন অনুসন্ধিৎসু পাঠক হিসেবে আমার আগ্রহ অনুবাদ অবধি বিস্তার লাভ করে। এই পথচলায় আমি বহু যুগান্তকারী, গবেষণামূলক, উদ্দীপনামূলক ও আত্ম-উন্নয়নমূলক বইয়ের মুখোমুখি হয়। Man’s Search for Meaning তার মধ্যে নিঃসন্দেহে একটি।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে প্রকাশিত হওয়া বইটির সাথে আমার সাক্ষাৎ বেশ দেরি করেই হয় বটে! তবে বইটি হাতে পেয়ে কয়েকদিনের মধ্যে সমাপ্ত করার পর দু’য়েকদিন নিস্তব্ধ ছিলাম। নিস্তব্ধ ছিলাম ভিক্টর ফ্রাঙ্কলের জীবন আর জীবনের অর্থ নিয়ে বিষদ বিবরণের মুখোমুখি হয়ে। হরেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও যে জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় কিম্বা জীবনের মর্যাদা সমুন্নত রাখা যায় তা তিনি বইটিতে নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া অসহনীয় যন্ত্রণাদায়ক মুহূর্তগুলিকে বিখ্যাত বেশ কয়েকজন মানুষের উদ্ধৃতি দিয়ে নিজের উপস্থাপন করেছেন।
আমি প্রায় বলে থাকি যে দু’টি বই (শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের পার্থিব ও কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুক্ষুধা) আমাকে রীতিমতো বাকরুদ্ধ করে রেখেছিল তার মধ্যে Man’s Search for Meaning বইটিও সংযুক্ত করা যায়। জীবনের অর্থ সন্ধানে ভিক্টর ফ্রাঙ্কলের উদ্ভাবিত তত্ত্ব লগোথেরাপি যেকারো জীবন বদলে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে।
আশা রাখি বইটি জীবন সম্পর্কে মানুষের ধারণার আমূল পরিবর্তন সাধিত করবে। বই-ই হোক মানুষের সৃষ্টিশীলতার পাথেয়।
ভূমিকা: Man’s Search for Meaning Bangla
ভিক্টর ফ্রাঙ্কলের Man’s Search for Meaning বইটি আমাদের সময়ের বিখ্যাত বইগুলির মধ্যে একটি। সাধারণত, যদি কোনও বইয়ে এমন কোনো অংশ যাতে থাকে কোনো মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার মতো ক্ষমতা তাহলে বইটি বারংবার পড়ার ও নিজের বইয়ের তাকে জায়গা করে নেওয়ার অধিকার প্রতিপাদন করে। বইটিতে এরকম বেশ কয়েকটি অংশ রয়েছে।
সর্বাগ্রে এটি একটি বেঁচে থাকার বিষয়ে বই। অনেক জার্মান এবং পূর্ব ইউরোপীয় ইহুদি যারা কেবল নিজেদেরকে সুরক্ষিত মনে করেছিল, ফ্র্যাঙ্কল তাদের মতো একজন যাকে নাৎসি বন্দী এবং উচ্ছেদ শিবিরের অন্তর্জালে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। বাইবেলের কথা “অগ্নি হইতে উদ্ধৃত অর্ধদগ্ধ কাষ্ঠস্বরূপ” এর মতো তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। তারপরও বইটি তার বেঁচে থাকার যন্ত্রণা, কষ্টভোগ ও ক্ষয়ক্ষতির চেয়েও তার বেঁচে থাকার শক্তির উৎস সম্পর্কে একটি বিবরণ। বইটিতে ফ্রাঙ্কল জার্মান দার্শনিক ফ্র্যড্রিক নিটসের উদ্ধৃতি He who has a Why to live for can bear almost any How অর্থাৎ যার ‘কেন’ বেঁচে থাকতে হবে তার কারণ রয়েছে সে প্রায় যে কোন ‘উপায়ই’ সহ্য করতে সক্ষম। তিনি শানিতভাবে বর্ণনা করেছেন যে, কারাবন্দীদের যারা জীবনের উপর আশা ছেড়ে দিয়েছিলো, যারা হারিয়েছিল ভবিষ্যতের সব আশা-প্রত্যাশা আর তারাই অনিবার্যভাবে মারা গিয়েছিল। খাবার আর ঔষধ-পত্রের সংকটের চেয়েও তারা মারা গেছে আশা-প্রত্যাশা আর বেঁচে থাকার জন্য কোন কিছু না থাকার দরুন। অপর দিকে, ফ্র্যাঙ্কল যুদ্ধের পর তার স্ত্রীকে দেখতে পাওয়ার চিন্তাকে জাগ্রত আর যুদ্ধের পর অশউইৎয শিবির থেকে লব্ধ অভিজ্ঞতার উপর মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে শিক্ষা প্রদানের স্বপ্নে দেখার মধ্য দিয়েই তিনি নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। স্পষ্টতই যে বন্দীরা বেপরোয়া-ভাবে বেঁচে থাকতে চেয়েছিল তারা মারা গিয়েছিল, কেউ ব্যাধিয় আর কেউ কেউ শব-চুল্লিতে। তবুও, ফ্রাঙ্কল ‘কেন অনেকেই মারা গিয়েছে’ সে প্রশ্নে বিচলিত হওয়ার চেয়ে ‘কেনো কেউ বেঁচে থেকেছে’ সে প্রশ্নে বিচলিত ছিলেন।
অশউইৎয (Auschwitz) শিবিরে তাঁর ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ইতিমধ্যেই তার অন্যতম মূল ধারণাকে আরও শক্তিশালী করে তুলে। জীবন মানে মূলত আনন্দের সন্ধান করা নয়, যেমন সিগমুন্ড ফ্রয়েড বিশ্বাস করেছেন, বা আলফ্রেড অ্যাডলারের মতে ক্ষমতা বা প্রতিপত্তির সন্ধানও নয়, বরং তার অর্থের সন্ধান করা। কারও জীবনে মহান বা মহৎ কাজ হলো তার জীবনের অর্থ সন্ধান করা। জীবনের সে অর্থের পেছনে ফ্র্যাঙ্কল তিনটি সম্ভাব্য উৎস লক্ষ্য করেন: কর্ম (কারো জন্য অর্থবহ কোন কিছু করা), ভালবাসা ( কারো প্রতি প্রতি যত্নশীল হওয়া, যেমনটা ফ্রাঙ্কল অশউইৎয শিবিরে কঠিন সময়ের মাঝেও তার স্ত্রীর ছবিটি আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন), এবং কঠিন সময়ে মনোবল। যন্ত্রনাভোগ ও যন্ত্রণা নিতান্তই অর্থহীন; তবে যন্ত্রণার প্রতি আমারা কিরূপ সাড়া দিয়ে থাকি তার উপরই নির্ভর করে এর অর্থ। এক পর্যায়ে তিনি লিখেন যে, “একজন মানুষ সাহসী, মর্যাদাপূর্ণ এবং নিঃস্বার্থ থাকতে পারে বা আত্মরক্ষার তিক্ত লড়াইয়ে সে তার মানবিক মর্যাদাকে ভুলে গিয়ে পশুতেও রূপান্তরিত হবে পারে।” তিনি স্বীকার করেন যে নাৎসি বন্দীদের খুব কম লোকই মর্যাদাপূর্ণ এবং নিঃস্বার্থ থাকতে পেরেছে, “তারপরও মানুষের আভ্যন্তরীণ শক্তি যে তাকে তার বাহ্যিক পরিণতির ঊর্ধ্বে উপস্থাপন করতে পারে তা প্রমাণ করার জন্য তেমনি একটি মাত্র উদাহরণই যথেষ্ট”।
পরিশেষে, ফ্রাঙ্কলের সবচেয়ে স্থায়ী অন্তর্দৃষ্টি, যা আমি প্রায়শই আমার নিজের জীবন ও চিকিৎসা পরামর্শ বা কাউন্সেলিং পরিস্থিতিতে অসংখ্যবার পেশ করেছি: আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরের শক্তি হয়তো আপনার সবকিছুই কেড়ে নিতে পারে কেবল একটি জিনিস ব্যতীত, আর তা হলো কোন পরিস্থিতিতে আপনি কিভাবে সাড়া দিবেন তা নির্বাচন করার স্বাধীনতা। আপনার জীবনে যা কিছু ঘটে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, কিন্তু আপনার জীবনে যা ঘটে যায় তার প্রতি আপনার অনুভূতিকে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
আমেরিকান নাট্যকার আর্থার মিলের Incident of Vichy নাটকের এক দৃশ্যে দেখা যায় যে উচ্চ-মধ্য-শ্রেণীর একজন পেশাজীবীকে তার শহরটি ধকল করা নাৎসি কর্তৃপক্ষের সামনে উপস্থিত হয়ে তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশংসাপত্র, বিখ্যাত ব্যক্তিদের সকল পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে দেখা যায়। তাতে নাৎসি কর্তৃপক্ষ জিজ্ঞেস করেন, এর সবকিছুই কি তোমার? তিনি মাথা নেড়ে বললেন হ্যাঁ। নাৎসি কর্তৃপক্ষ তখন সবকিছু ময়লার ঝুড়িতে নিক্ষেপ করে বলেন ‘চমৎকার, তোমার এখন কিছুই নেই’।
লোকটি, যার আত্মসম্মান সর্বদা অন্যের শ্রদ্ধার উপর নির্ভরশীল ছিল, আবেগগতভাবে বিপর্যস্ত হয়। ফ্রাঙ্কলের বিতর্ক হলো যে যতক্ষণ না আমাদের কোনো পরিস্থিতিতে আমরা কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব তা নির্বাচন করার স্বাধীনতা বজায় থাকে ততক্ষণ কেউ আমাদের কাছ থেকে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিতে পারে না।
আমার নিজস্ব মণ্ডলীর অভিজ্ঞতা আমাকে ফ্রাঙ্কেলের অন্তর্দৃষ্টির সত্যতা প্রমাণ করেছে। আমি এমন সব সফল ব্যবসায়ীদের চিনতাম যারা অবসর নেওয়ার পর পর-ই জীবনের সমস্ত উৎসাহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলে। তাদের কাজই তাদের জীবনকে অর্থবহ করে তুলে। প্রায়শই তাদের কাজই তাদের জীবনকে অর্থ প্রদান করে আর কাজহীন অবসরে তারা দিনের পর দিন হতাশায় বসে দিনযাপন করে। আমি এমনও লোকদের চিনি যারা চূড়ান্তভাবে সবচেয়ে ভয়াবহ যন্ত্রণা ও পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন যতক্ষণ তারা বিশ্বাস করেছিল যে তাদের দুঃখকষ্টের মধ্যে কোন অর্থ রয়েছে। হতে পারে তা কোনো পারিবারিক মাইলফলক যে তারা দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে চেয়েছিল বা তাদের দুঃখকষ্ট পর্যবেক্ষণের পর ডাক্তারদের সন্ধান পাওয়ার নিরাময়ের সম্ভাবনাকে জানিয়ে দিতে তাদের বেঁচে থাকার ‘কারণ’ই তাদের ‘কিভাবে’ বাঁচতে হয় তার সক্ষমতা দান করেছে।
আর ফ্রাঙ্কলের অভিজ্ঞতার সাথে আমার নিজের অভিজ্ঞতা প্রতিধ্বনিত হয় অন্যভাবে। যেমনটি আমার লিখা When Bad Things Happen to Good People বইয়ের চিন্তা-ধারা সমূহ শক্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে সমর্থ হয়, তা কারণ আমাদের ছেলের অসুস্থতা ও মৃত্যুকে অনুধাবন করতে আমাদের সংগ্রামকে কেন্দ্র করে পেশ করা হয়েছিল, তেমনি অর্থবহ জীবনের প্রতি ধাবিত করে অন্তরাত্মার সুস্থতার জন্য ফ্রাঙ্কলের logotherapy বা লগোথেরাপি বা মর্ম-চিকিৎসা মতবাদ অশউইৎয বন্দী শিবিরের যন্ত্রণাময় পরিস্থিতি ব্যতিরেকে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে। প্রথম অংশটি ব্যতীত বইটির শেষার্ধটি হবে খুব কমই অর্থবহ।
আর ফ্রাঙ্কলের অভিজ্ঞতার সাথে আমার নিজের অভিজ্ঞতা প্রতিধ্বনিত হয় অন্যভাবে। যেমনটি আমার লিখা When Bad Things Happen to Good People বইয়ের চিন্তা-ধারা সমূহ শক্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে সমর্থ হয় কারণ আমাদের ছেলের অসুস্থতা ও মৃত্যুকে অনুধাবন করতে আমাদের সংগ্রামকে কেন্দ্র করে পেশ করা হয়েছিল, তেমনি অর্থবহ জীবনের প্রতি ধাবিত করে অন্তরাত্তার সুস্থতার জন্য ফ্রাঙ্কলের logotherapy বা লগোথেরাপি বা মর্মচিকিৎসা মতবাদ অশউইটয বন্ধি শিবিরের যন্ত্রনাময় পরিস্থিতি ব্যতিরেখে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে। প্রথম অংশটি ব্যতিত বইটির শেষার্ধটি হবে খুব কমই অর্থবহ।
আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় যে বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ড. গর্ডন আলপোর্ট Man’s Search for Meaning এর ১৯৬২ সংস্করণের ভূমিকাটি লিখেছিলেন, আর একজন ধর্মযাজকই এই পুনঃ-সংস্করণের ভূমিকাটি লিখেছেন। আমরা অনুধাবন করতে সমর্থ হয়েছি যে নিগূঢ়ভাবে এটি একটি ধর্মীয় বই। যে, জীবন যে অর্থবহ এবং আমাদের পরিস্থিতি সত্ত্বেও আমাদের জীবনকে যে অর্থ-পূর্ণভাবে দেখা দরকার তার দিকে বইটি বিশেষ জোর দেয়। যে জীবনের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য রয়েছে। আর এর আসল সংস্করণে, পরিশিষ্ট যুক্ত হওয়ার পূর্বে, ভূমিকাটি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে অধিক লিখিত ধর্মীয় ব্যাখ্যা দিয়ে সমাপ্ত হয়
আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় যে বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ড. গর্ডন আলপোর্ট Man’s Search for Meaning এর ১৯৬২ সংস্করণের ভূমিকাটি লিখেছিলেন, আর একজন ধর্মযাজকই এই পুনঃ-সংস্করণের ভূমিকাটি লিখেছেন। আমরা অনুধাবন করতে সমর্থ হয়েছি যে নিগূঢ়ভাবে এটি একটি ধর্মীয় বই। যে, জীবন যে অর্থবহ এবং আমাদের পরিস্থিতি সত্ত্বেও আমাদের জীবনকে যে অর্থ-পূর্ণভাবে দেখা দরকার তার দিকে বইটি বিশেষ জোর দেয়। যে জীবনের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য রয়েছে। আর এর আসল সংস্করণে, পরিশিষ্ট যুক্ত হওয়ার পূর্বে, ভূমিকাটি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে অধিক লিখিত ধর্মীয় ব্যাখ্যা দিয়ে সমাপ্ত হয়
আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় যে বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ড. গর্ডন আলপোর্ট Man’s Search for Meaning এর ১৯৬২ সংস্করণের ভূমিকাটি লিখেছিলেন, আর একজন ধর্মযাজকই এই পুনঃ-সংস্করণের ভূমিকাটি লিখেছেন। আমরা অনুধাবন করতে সমর্থ হয়েছি যে নিগূঢ়ভাবে এটি একটি ধর্মীয় বই। যে, জীবন যে অর্থবহ এবং আমাদের পরিস্থিতি সত্ত্বেও আমাদের জীবনকে যে অর্থ-পূর্ণভাবে দেখা দরকার তার দিকে বইটি বিশেষ জোর দেয়। যে জীবনের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য রয়েছে। আর এর আসল সংস্করণে, পরিশিষ্ট যুক্ত হওয়ার পূর্বে, ভূমিকাটি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে অধিক লিখিত ধর্মীয় ব্যাখ্যা দিয়ে সমাপ্ত হয়:
আমাদের প্রজন্ম বাস্তবাদী, কারণ আমরা মানুষের প্রকৃত রূপ জেনেছি।
সর্বোপরি, মানুষই হলো সেই সত্তা যে অশউইটয এর গ্যাস চেম্বার উদ্ভাবন করেছে;
তথাপি, সমুন্নত শীরে প্রভুর প্রার্থনা বা শ্যামা ইসরাইল মুখে
যারা সেই গ্যাস চেম্বারে প্রবেশ করেছে তারাও সে একই সত্তা।
হ্যারল্ড এস. কুশের
বিশিষ্ট আমেরিকান রেবাই
১৯৯২ সংস্করণে লেখকের ভূমিকা
আজ পর্যন্ত অন্যান্য ২১টি ভাষার প্রকাশনা সহ বইটির শ খানেক প্রকাশনা হয়েছে ইংরেজি ভাষায়। আর কেবল ইংরেজি সংস্করণই ৩০ লক্ষ্য সংখ্যা বিক্রি হয়েছে।
এগুলি শুকনো তথ্য, এবং এ কারণেই সম্ভবত আমেরিকান সংবাদপত্র এবং বিশেষত আমেরিকান টিভি স্টেশনের সাংবাদিকরা তাদের ঘনঘন সাক্ষাতকারে , এই তথ্য তালিকাভূ্ক্তির পর বিস্মিত হয়ে শুরু করেন: “ড. ফ্র্যাঙ্কল, আপনার বইটি একটি সত্যিকারের বেস্টসেলারে পরিণত হয়েছে – এই সাফল্য সম্পর্কে আপনার অনুভূতি কি? এতে আমি প্রতিক্রিয়া করে বলি যে প্রথমত: আমি আমার বইয়ের বেস্টসেলার অবস্থানকে আমি কোনো কৃতিত্ব আর অর্জন বলে মনে করি না, বরং মনে করি এটি একটি আমাদের সময়ের দুঃখ-যন্ত্রণার একটি বহিঃপ্রকাশ: যার শিরোনামই জীবনের অর্থের প্রশ্নের সাথে মুখোমুখে হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় এমন একটি বই হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে যায়, তাহলে বুঝতে হবে প্রশ্নটি খুবই জরুরী।
বস্তুত, অন্য কিছু হয়তো বইটির প্রভাব বিস্তার লাভের কারণ: বইটির দ্বিতীয় অংশের তাত্ত্বিক অংশটি ( সংক্ষেপে লগোথেরাপি) বইটির প্রথম অংশের আত্মজীবনীমূলক বর্ণনা (বন্দী শিবিরের অভিজ্ঞতা) থেকে কারো সম্ভাব্য শিক্ষায় পরিণত হয়, যেমনটি লক্ষ্য করা যায়, যেখানে দ্বিতীয় অংশটি আমার তত্ত্বের অস্তিত্ত্বগত বৈধতার কারণ হিসেবে কাজ করে। তাই, উভয় অংশই পরস্পরের বিশ্বস্ততার সমর্থক।
১৯৪৫ সালে যখন আমি বইটি লিখেছিলাম তার কিছুই আমার মাথায় ছিলনা। আর পরপর ৯দিনেই বইটি লিখে শেষ করি ও বেনামে বা নাম-হীনভাবে প্রকাশ করার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ থাকি। বস্তুত, জার্মান ভাষার মূল সংস্করণে আমার নাম নেই, যদিও শেষ মুহূর্তে বইটির প্রাথমিক প্রকাশনার পূর্বে আমার বন্ধু-বান্ধব যারা বইটির শিরোনাম পৃষ্ঠার আমার নাম ছাপিয়ে প্রকাশ করার জন্য জোরাজুরি করছিল তাদের কাছে ধরাশায়ী হয়ে পড়ি। প্রথম দিকে যদিও পরম প্রত্যয়ের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সাহিত্য কর্ম হিসেবে এটি লিখা হয়েছিল যে বইটি কখনো লেখকের জন্য সাহিত্য পরিচিতি বয়ে আনবে না। আমি শুধু চেয়েছিলাম একটি মূর্ত উদাহরণের মাধ্যমে পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করতে যে, যে কোনো পরিস্থিতিতেও জীবনে সম্ভাব্য অর্থ বজায় থাকে, হোক তা কোনো সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতি। আর আমি ভেবেছিলাম যদি সেই অর্থকে বন্দী শিবিরের মতো কোনো অবস্থায় উপস্থাপন করা যায় তাহলে হয়তো আমার বইটির কথা মানুষ শুনবে। তাই আমি যে পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে গিয়েছি তা লিখে রাখার দায়বদ্ধতা অনুভব করলাম কারণ আমি ভেবেছিলাম যারা জীবনে হতাশার মধ্যদিয়ে জীবন-যাপন করছে তাদের কাছে হয়তো উপকারে আসবে।
আর তাই এটি আমার কাছে আশ্চর্যজনক এবং লক্ষণীয় উভয়ই এই জন্য যে—আমার লিখা কয়েক ডজন বইয়ের মাঝে— এই বইটি যা আমি বেনামে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলাম যাতে এটি কখনই লেখকের পক্ষে কোনও খ্যাতি বয়ে না আনতে পারে,আর সেটিই হয়ে গেলে একটি সফল বই। বার বার আমি তাই ইউরোপ এবং আমেরিকায় আমার শিক্ষার্থীদের বারংবার উপদের দেয় : যে “সাফল্যের দিকে লক্ষ্য রেখো না—যতই তুমি এর দিকে লক্ষ্য রাখবে ও এটিকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে পরিণত করবে, ততই তোমরা লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে। কারণ সুখের ন্যায়, সাফল্যকে অনুসরণ করা যায় না; সাফল্যকে আহরণ করা চাই আর এটি কেবল তার চেয়ে বেশি কারণের প্রতি নিজের চেয়ে মহৎ কোনো কাজে উৎসর্গের অনিচ্ছাকৃত পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বা নিজের চেয়ে মহৎ কোনো ব্যক্তির নিকট আত্মসমর্পণের অপ্রত্যাশিত ফল বা উপজাত হিসেবে ঘটে। সুখ অবশ্যই আসবে, আর সাফল্যের ক্ষেত্রেও একই হয়ে থাকে: উদ্বিগ্ন না হয়ে এটিকে সংঘটিত হতে দিতে হবে। আমি চাই আপনার বিবেক আপনাকে যা করতে আদেশ করে তার দিকে লক্ষ্য রাখুন এবং যতদূর সম্ভব সর্বোচ্চটা দিয়ে তা চালিয়ে যান। তারপর আপনি দেখবেন শেষ পর্যন্ত, আমি বলেছি শেষ পর্যন্ত, সফলতা আপনাকে অনুসরণ করছে কারণ আপনি সফলতা সম্পর্কে ভুলে গেছেন”।
পাঠকেরা সম্ভবত জিজ্ঞেস করতে পারে হিটলার অস্ট্রিয়া দখল করার পর আমার ভাগ্যে যা এসে পড়েছিল তা থেকে কেনো আমি পালিয়ে যেতে চেষ্টা করিনি। নিচের কাহিনী স্মরণ করার মাধ্যমে সে প্রশ্নের উত্তর দেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভিয়েনায় আমেরিকান দূতাবাস থেকে অভিবাসন ভিসা গ্রহণ করার জন্য আমি একটি আমন্ত্রণ পাই। শীঘ্রই আমাকে অস্ট্রিয়া ত্যাগে অনুমতি দেওয়া হবে প্রত্যাশায় আমার বৃদ্ধ বাবা-মা অতি-উৎফুল্ল হয়েছিলেন। যদিও হঠাৎ আমি ইতস্তত: হই। একটি প্রশ্ন আমাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে: আমি কি আসলেই আমার বাবা-মাকে একা করে তাদের পরিণতির মুখোমুখি করে চলে যেতে পারি, যাদের কিছু আগে বা পরে বন্দী শিবির বা তথাকথিত নির্মূল শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে ? একটি উর্বর ভূমি যেখানে আমি আমার অনেক বই লিখতে পারতাম সেখানে গিয়ে কি আমার উদ্ভাবন, লগোথেরাথির লালন করার উচিৎ? অথবা আমার কি উচিৎ একজন প্রকৃত সন্তান হিসেবে আমার কর্তব্যের দিকে মনোনিবেশ করা, যে সন্তান তার বাবা-মাকে সুরক্ষা করতে যাই প্রয়োজন তাই করতে প্রস্তুত? বিভিন্নভাবে আমি সমস্যাটি নিয়ে চিন্তা করেও কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারিনি; এ ধরনের দ্বিধাগ্রস্থতাই কাউকে যেমন কথায় আছে ‘স্বর্গ থেকে আসা ইঙ্গিত’ পাওয়ার প্রত্যাশা করতে বাধ্য করে।
আর ঠিক তখনই আমি লক্ষ্য করলাম ঘরের এক টেবিলে একটি মার্বেল পড়ে আছে। আমার বাবার কাছে মার্বলটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন ন্যাশনাল সোশালিস্টরা যেখানে ভিয়েনা-বাসী সবচেয়ে বৃহৎ সিনাগগ পুড়িয়ে ফেলেছিল সেখানেই তিনি মার্বেলটি খুঁজে পেয়েছেন। তিনি তা কুড়িয়ে বাসায় নিয়ে আসলেন কারণ সেটি ছিল মূসার কাছে দেওয়া মহান দশ আজ্ঞা খুদায় করা ফলকের একটি অংশ। স্বর্ণাক্ষরে তাতে একটি ইব্রিয় ভাষার বর্ণ খুদায় করা ছিল: আমার বাবা আমাকে বলেন যে সে বর্ণটি ছিল দশ আজ্ঞার এক আজ্ঞা। আগ্রহের সাথে আমি জানতে চাইলাম “কোন আজ্ঞাটি”? “তোমাদের মা-বাবাকে সম্মান করে চলবে। তাতে প্রতিজ্ঞাত দেশে তোমরা অনেক দিন বেঁচে থাকবে”। সেই মুহূর্তেই আমি দেশে আমার আমার বাবা-মার সাথে থেকে যেতে সিদ্ধান্ত নিলাম আর আমেরিকার ভিসা অতিক্রান্ত হতে দিলাম।
ভিক্টর ই. ফ্রাঙ্কল
ভিয়েনা, ১৯৯২